1. admin@ukbanglanews.com : UK Bangla News : Tofazzal Farazi
  2. professionalseo36@gmail.com : Omar Faruque : Omar Faruque
  3. tuhinf24@gmail.com : Firoj Sabhe Tuhin : Firoj Sabhe Tuhin
মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩
  • ২৪ বার

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই। আজ মঙ্গলবার রাত ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। বার্ধক্যজনিত সমস্যাও দেখা দিয়েছিল তাঁর। ৫ এপ্রিল তাঁকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত রোববার তাঁর চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে লাইফ সাপোর্টে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন মোস্তাফী রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর শুনে মধ্যরাতে হাসপাতালে ছুটে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁর শুভান্যুধায়ীরাও হাসপাতালে ভিড় করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও তাঁর মৃত্যুতে বহু মানুষ শোক প্রকাশ করেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। অসুস্থ শরীরেও তিনি নাগরিকদের বাক্‌স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন ভাস্কুলার সার্জন। তিনি মূলত জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ। ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি দেশকে ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে, ওই নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বহির্বিশ্বে তাঁর পরিচয় বিকল্প ধারার স্বাস্থ্য আন্দোলনের সমর্থক ও সংগঠক হিসেবে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মা–বাবার ১০ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় তিনি বাম রাজনীতিতে যুক্ত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় হাসপাতালের অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৬৪ সালে এমবিবিএস পাস করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি সাধারণ সার্জারি ও ভাস্কুলার সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা ছিল জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, হাসপাতালের জন্য ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। যাঁদের আগে কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না, এমন নারীরা কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েই হাসপাতালে সেবার কাজ করেছিলেন।

বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালের সেই অভিজ্ঞতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী কাজে লাগিয়েছিলেন ১৯৭২ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা যে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব, তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রমাণ করে। সেই অভিজ্ঞতার কথা বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট–এ প্রবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। এর পর থেকে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ধারণাটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায়। জাফরুল্লাহ চৌধুরী মৃত্যুর আগপর্যন্ত ট্রাস্টি হিসেবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করতে চাইতেন সহজভাবে। তিনি বিশ্বাস করতেন, চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসেবার জন্য সব ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রিধারী বা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসকের দরকার নেই। স্বল্প শিক্ষিত মানুষকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়েও সেবা পাওয়া সম্ভব। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রথম স্বাস্থ্যবিমা চালু হয়। জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাঁর কোনো উদ্যোগকে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন, গণস্বাস্থ্যের মাধ্যমে গড়ে তোলা সফল স্বাস্থ্য উদ্যোগ সরকারই যেন সারা দেশে প্রয়োগ করে বা ছড়িয়ে দেয়।

স্বাধীনতার পর দেশের ওষুধের বাজারে বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। তখন বাজারে চার হাজার ধরনের ওষুধ ছিল। এর প্রায় সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। ওষুধ ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনামলের ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতি পরিস্থিতি পাল্টে দেয়। জাতীয় ওষুধনীতি দেশি কোম্পানিগুলোকে ওষুধ উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করে দেয়, পাশাপাশি দেশে তৈরি হওয়া ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা বন্ধ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ। দেশের মানুষকে স্বল্প মূল্যে ওষুধ দেওয়ার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ওষুধ কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করে।

বৈশ্বিকভাবে বিকল্প স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভূমিকা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি আয়োজন করে। এর বিকল্প হিসেবে কয়েক বছর পরপর আয়োজন করা হয় পাবলিক হেলথ অ্যাসেম্বলি বা জনগণের স্বাস্থ্য সম্মেলন। এটা আয়োজন করে পিপলস হেলথ মুভমেন্ট নামের একটি বৈশ্বিক সংগঠন। এই সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনের নানা পর্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বা সম্মাননা পেয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৭৭ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার। ফিলিপাইনের র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান ১৯৮৫ সালে। ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে তাঁকে দেওয়া হয় রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড। কানাডার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন ২০০৯ সালে দেয় ডক্টর অব হিউম্যানিটেরিয়ান উপাধি। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে থেকে ২০১০ সালে দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড। যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজ ২০২২ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ‘এনআরবি লিবারেশন ওয়ার হিরো ১৯৭১’ পুরস্কার দেয়।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ৫০টির বেশি দেশে বিভিন্ন সম্মেলন বা সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে অংশ নেন। একাধিক দেশকে জাতীয় ওষুধনীতি তৈরিতে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে একটির নাম রিসার্চ: আ মেথড অব কলোনাইজেশন। এটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এরপর এটি বাংলা ছাড়াও ফরাসি, জার্মান, ইতালি, ডাচ, স্প্যানিশ ও একাধিক ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে জীবনের শেষ বছরগুলোতে রোগব্যাধির সঙ্গে লড়তে হয়েছে। জটিল কিডনি রোগে ভুগছিলেন। মানুষ যেন সহজে প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি পেতে পারেন, সে জন্য তিনি আইনের পরিবর্তন চেয়েছিলেন। পাশাপাশি তাঁর হাতে গড়ে ওঠা গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ১০০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট তৈরি করেছিলেন। ওই ইউনিটে নিজেই ডায়ালাইসিস করাতেন। ইউনিটটি তিনি করেছিলেন কম মূল্যে সাধারণ মানুষকে সেবার সুযোগ করে দিতে। একটি ক্যানসার হাসপাতাল করার ইচ্ছাও তাঁর ছিল।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 UK বাংলা News
Design & Developed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!