বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে নিরাপদ ও কার্যকর টিকা কেনার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৯৪ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। এই অর্থ বাংলাদেশের ৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।
এ ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টের মনমোহন প্রকাশ চুক্তিতে সই করেন। ঢাকায় শেরেবাংলা নগরে ইআরডি কার্যালয়ে চুক্তিটি সই হয়। এডিবির ঢাকা কার্যালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, ‘মানুষের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা এবং কোভিড-১৯ অতিমারি থেকে দ্রুত আর্থসামাজিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিতে নিরাপদ ও কার্যকর টিকার ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘করোনার টিকা সংগ্রহের জন্য এটি এককভাবে এ পর্যন্ত আমাদের দেওয়া সবচেয়ে বড় সহায়তা। আর সাশ্রয়ী দামে মানসম্পন্ন টিকা দ্রুত কেনার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করতে এডিবি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
মনমোহন প্রকাশ বলেন, ‘টিকাই কেবল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ এবং এই ভাইরাসজনিত মৃত্যু কমিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ওপর থেকে চাপ কমাতে পারে। করোনার টিকাসংক্রান্ত রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন, সরবরাহ, বিতরণ, তদারকি, সমন্বয় এবং ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের উন্নয়নেও এডিবি বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুনর্গঠিত অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য এই ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’
এডিবির এশিয়া প্যাসিফিক ভ্যাকসিন অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটির (অ্যাপভ্যাক্স) কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে নিয়মিত ঋণ ও সহজ শর্তের ঋণ হিসেবে ৪৭ কোটি করে ৯৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সদস্য দেশগুলোকে দ্রুত ন্যায্যমূল্যে টিকা কেনায় সহায়তা করার লক্ষ্যে এডিবি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ৯০০ কোটি ডলারের অ্যাপভ্যাক্স তহবিল গঠন করে।
এডিবির দেওয়া এই ঋণের অর্থে বাংলাদেশ করোনার ৪ কোটি ৪৭ লাখ ডোজ টিকা কিনবে, যা আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ২ কোটির বেশি মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ভ্যাকসিনেশন প্ল্যান ফর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায়।
বাংলাদেশ সরকারকে চলমান ৭০ লাখ ডলারের কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে এডিবি সহায়তা করছে, যাতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলা এবং টিকা সরবরাহব্যবস্থা জোরদার করা যায়।
এ ছাড়া এডিবি চলতি জুন মাসেই বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা ও পুনরুদ্ধার কর্মসূচির জন্য ২৫ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে। এর আগে ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী সম্প্রসারণ, শ্রমঘন শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) কর্মীদের কর্মসংস্থান অব্যাহত রাখার জন্য ২০২০ সালের জুনে ৫০ কোটি ডলার দিয়েছে সংস্থাটি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সরঞ্জাম ক্রয় ও সরবরাহ এবং রোগনির্ণয় ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০২০ সালের এপ্রিলে ১০ কোটি ডলার এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ৫ কোটি ডলার দিয়েছে এডিবি। এ ছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সাড়ে তিন লাখ ডলার এবং একটি চলমান দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ১৩ লাখ ডলার দিয়েছে এডিবি।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। বর্তমানে সংস্থাটির মোট সদস্য ৬৮। এর মধ্যে এই অঞ্চলের সদস্য ৪৯টি দেশ।
Leave a Reply