1. admin@ukbanglanews.com : UK Bangla News : Tofazzal Farazi
  2. professionalseo36@gmail.com : Omar Faruque : Omar Faruque
  3. tuhinf24@gmail.com : Firoj Sabhe Tuhin : Firoj Sabhe Tuhin
মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩, ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে আমাদের রোল মডেলের খুব অভাব

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩
  • ৬০ বার

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়ে গেল ১৯ মার্চ। এতে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্যটি তিনি দিয়েছিলেন, তারই অনুবাদ থাকল আজ।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়ে গেল ১৯ মার্চ। এতে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্যটি তিনি দিয়েছিলেন, তারই অনুবাদ থাকল আজ।

 

আমি কোনো শিক্ষাবিদ নই। অর্থনীতির একজন ছাত্র বলতে পারো। ঠিক জানি না, কী বললে তোমরা আগ্রহ পাবে, কোন কথা এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে মানানসই হবে। কিন্তু একটা কথা বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি। দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তোমরা স্নাতক করছ, তোমরা সেই মানবসম্পদের প্রতিনিধিত্ব করো, যারা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ গড়বে। সমাজের উন্নয়নের পেছনে বেশ কিছু বিষয়ের ভূমিকা থাকে। যেমন প্রাকৃতিক সম্পদ, ভৌত সম্পদ, প্রযুক্তি, শাসনপ্রক্রিয়ার মান ইত্যাদি। কিন্তু এসব কিছুর মূলে হলো মানবসম্পদ, যা গড়ে ওঠে শিক্ষা ও শিখনের মধ্য দিয়ে।

মানবসম্পদই যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত গড়ে দেয়, তার একটা শক্ত উদাহরণ তোমাদের সামনে তুলে ধরছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের জার্মানি ও জাপানের কথাই ধরো। যুদ্ধে তাদের অবকাঠামো অনেকাংশেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। হয়তো যুদ্ধের নানা সিনেমায় তোমরা দেখেছ। কিন্তু যুদ্ধের এক বা দুই দশকের মধ্যে এই দুটি দেশই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। কীভাবে পারল? এটা ঠিক যে মার্কিন সহায়তা একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু তার চেয়েও তাদের বড় শক্তি ছিল একটি প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল জনবল।

ভৌত অবকাঠামোও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মানবসম্পদ ছাড়া এটা স্রেফ কঙ্কালের মতো। অতএব আমি তোমাদের অনুরোধ করব, আমাদের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তোমরা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা উপলব্ধি করো। মনে রেখো, শিক্ষা ও দক্ষতা তোমাকে সারা জীবন পথ দেখাবে। গবেষণা বলে, আধুনিক অর্থনীতিতে মানুষ তাঁর জীবনের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ দক্ষতাই অর্জন করে স্কুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর, কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। যে শিক্ষা তুমি পেয়েছ, কর্মজীবনে তা তোমাকে আরও জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করবে, যা ক্রমাগত বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধানের দিকে নিয়ে যাবে। কেবল তখনই তোমার এই ডিগ্রি নেওয়াটা সার্থক হবে।

আমরা জানি, বাংলাদেশের বিস্ময়কর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে, অনেকে যা কল্পনাও করতে পারেনি। এমনকি সমকক্ষ অনেক দেশ আমাদের ‘রোল মডেল’ মনে করছে। বস্তুগত উন্নয়ন হলেও আমরা বোধ হয় একধরনের নৈতিক অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ভোগবাদিতার এই যুগে এটি আদতে এক বৈশ্বিক চিত্র। চরম ‍পুঁজিবাদ, সম্পদের অসম বণ্টন আমাদের একটা প্রবল অসমতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তাই যখন পেশাজীবনে পা রাখবে, তখন ‘নৈতিক কম্পাস’–এর দিকেও চোখ রেখো। যদি অনুসরণ করার মতো কোনো রোল মডেল খুঁজে না পাও, হতাশ হয়ো না। বাংলাদেশে আমাদের রোল মডেলের খুব অভাব। অল্প যা-ও কিছু ছিল, তা-ও ‘লিমিটেড এডিশন’, প্রায় হারিয়ে গেছে। দিন শেষে তোমাকে নিজের ভেতরেই রোল মডেল খুঁজতে হবে। একান্ত নিজস্ব প্রতিভা ও একাগ্রতাই তোমাকে আনন্দময় ও পরিপূর্ণ জীবনের দিকে নিয়ে যাবে। যদি দেখো তোমার আশপাশে মেধার মূল্যায়ন নেই, নৈতিকতা হারাতে বসেছে, তবু আশা ছেড়ো না। কখনো কখনো হয়তো নিজেকে তোমার ফ্রানৎস কাফকার উপন্যাসের চরিত্র মনে হবে। যে চরিত্র চারদিকে শুধু ভুল আর খারাপের ছড়াছড়ি দেখে, কিন্তু এসব সংশোধনের কোনো পথ খুঁজে পায় না। এমন পরিস্থিতিতেও জীবনের লক্ষ্য ভুলে যাওয়া, নীতির সঙ্গে আপস করাটা কোনো বিকল্প হতে পারে না।

ভেবো না, সমাজের সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব তোমার একার কাঁধে। সবাই যদি যার যার জায়গা থেকে সততার সঙ্গে নিজের কাজটা করে, সমাজ এমনি সুন্দর হয়ে যাবে।

এ কারণেই তোমার শিক্ষার দুই উদ্দেশ্য—নিজের পেশাগত উন্নয়ন ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করা। দুটি আলাদা কিছু নয়। যে পেশাই বেছে নাও না কেন, যদি কায়মনোবাক্যে নিজের কাজটা করে যাও, তাহলে সমাজও উপকৃত হবে।

তুমি সৌভাগ্যবান। এমন একটা সময়ে তারুণ্য উপভোগ করছ, যখন প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। তোমার সামনে অজস্র সুযোগ। আগামী দুই বা তিন দশকের মধ্যে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটা কল্পনা করাও কঠিন। ঘরে বসেই তুমি যেকোনো চাকরি করতে পারো। দেশের সীমানা, ভিসা জটিলতা তোমাকে রুখতে পারে না। তুমি হয়তো জানবেও না, তোমার সহকর্মী কি মানুষ, নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কোনো রোবট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি তোমার চেয়ে বেশি স্মার্টও হয়, তবু তোমার মানবিক গুণাবলি যেন অটুট থাকে। ভবিষ্যতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিশ্চয়ই আজকের চ্যাটজিপিটির তুলনায় অনেক উন্নত হবে।

একধরনের উত্তেজনা আর দ্বিধা নিয়ে তোমরা আজ স্নাতক হচ্ছো। নিশ্চয়ই ভাবছ, কোন পেশাজীবন বেছে নেবে। আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে—শুধু টাকার জন্য কোনো কাজ বেছে নিয়ো না। বরং এমন কোনো কাজ করো, যেটা তুমি সত্যিকার অর্থে ভালোবাসো। জীবনসঙ্গী হিসেবে ভালোবাসার মানুষকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ভালোবাসার কাজ খুঁজে নেওয়াও কিন্তু তেমনই। দুই ক্ষেত্রেই বলব, সারা জীবনের জন্য একটা প্রতিশ্রুতিতে বাঁধা পড়ার আগে একটু সময় নাও।

আপাতত সময়টা উপভোগ করো। রবীন্দ্রনাথের একটা গান মনে পড়ছে, ‘নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণে শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে।’ তোমাদের সবাইকে অভিনন্দন, ধন্যবাদ। (ঈষৎ সংক্ষেপিত)

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 UK বাংলা News
Design & Developed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!