জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে অনেক বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ যায়। কারাবরণ করতে হয়ে অনেককে। সহিংসতা খানিকটা কমে আসতে শুরু করলে বেশ কিছু সংগঠন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়। জান্তাবিরোধী সংগঠনগুলো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পর সেখানে আবার সহিংসতা বেড়েছে। এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী তাদের পূর্ণশক্তি প্রয়োগ করলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে এএফপির এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে।
স্থানীয় এক পর্যবেক্ষণ সংগঠনের দেওয়া তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে সহিংসতায় ৮৮০ জন নিহত হয়েছেন।
মিয়ানমারের কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা রাইফেল ও বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করছেন। এসব অস্ত্র সেখানকার জঙ্গলে তৈরি করা হয়। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সেখান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে তাঁরা প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তুলছেন।
এসব প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জবাব দিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার ও গোলাবারুদ ব্যবহার করছে। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমে চীন ও দেশটির পূর্বাঞ্চলে থাইল্যান্ড সীমান্তে এসব প্রতিরক্ষা গ্রুপের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
ব্রাসেলস-ভিত্তিক দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলছে, সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখে পড়লে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের সেনাসদস্যদের বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে নামিয়ে দিতে পারে। এতে ব্যাপক প্রাণহানি হবে। তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হবেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। সহিংসতা বাড়লে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।
আইসিজির তথ্যমতে, মিয়ানমারের এমন সব জায়গায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যেসব জায়গায় গত এক দশকে কোনো সহিংসতা হয়নি। জাতিসংঘের গত সপ্তাহের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থানের আগে থেকেই অন্তত ২০টি জাতিগত বিদ্রোহীগোষ্ঠী রয়েছে। যারা বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং অনেক হতাহত হয়। জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে তৈরি হওয়া এসব প্রতিরক্ষা দল সেই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করেছে।
এদিকে মিয়ানমারের আইনজীবীরা বলছেন, দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জন্য পরিস্থিতি ততটাই কঠিন হয়ে পড়ছে। জান্তা সরকার বেছে বেছে আইনজীবীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। জান্তা সরকার বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হয়ে অন্য পথে হাঁটা শুরু করেছে। যেসব আইনজীবী বিক্ষোভকারী ও রাজনৈতিক বন্দীদের পক্ষে আইনি লড়াই করছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার ও নানাভাবে হয়রানি করছে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে অন্তত পাঁচজন আইনজীবীকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করেছে জান্তা। এই ঘটনাকে বিচার বিভাগের ওপর হামলা বলে মনে করছেন সেখানকার আইনজীবীরা। এ ছাড়া মিয়ানমারে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকেরাও গ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন।
Leave a Reply