এ মৌসুম ইতিবাচকভাবে শুরু করেছে বার্সেলোনা। আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেও চার খেলোয়াড়কে দলে টেনেছে। মেম্ফিস ডিপাই, সের্হিও আগুয়েরো, এরিক গার্সিয়া ও এমারসনকে দলে টানার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েও এখন লা লিগায় নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে নিতে পারছে না! কারণ, লা লিগার বেঁধে দেওয়া বেতনের সীমা বহু আগেই অতিক্রম করে বসে আছে বার্সা। তাঁদের নতুন খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে নিজেদের বর্তমান বেতনের হিসাব থেকে ২০ কোটি ইউরো কমিয়ে আনতে হবে।
শুধু লা লিগায় নয়, গোটা বিশ্বেই বেতনের দিক থেকে সবচেয়ে খরুচে ক্লাব ছিল বার্সেলোনা। কিন্তু সাবেক সভাপতি বার্তোমেউর অবিবেচক কিছু সিদ্ধান্তের কারণে বার্সেলোনা গত অর্থবছরে ১১৭ কোটি ইউরো দেনা দেখিয়েছে। এর মধ্যে ৭৩ কোটি ইউরোই স্বল্পমেয়াদি অর্থাৎ দ্রুত শোধ করতে হবে। অতীতের দলবদলের জন্য ৩২ কোটি ৩০ লাখ ইউরো দেনা আছে। এ ছাড়া বার্ষিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ ইউরো ‘এমোর্টাইজেশন’ খরচও আছে।
এর মধ্যেই করোনা এসে ধাক্কা দিয়েছে ফুটবল–বিশ্বকে। গ্যালারিতে দর্শক নেই। এ ধাক্কায় বার্সেলোনার আয়ও অনেক কমেছে। খেলোয়াড়েরা বারবার বেতন কমিয়েও ক্লাবের আর্থিক দুর্দশা কমাতে পারেননি। গত অর্থবছরে বার্সেলোনা যত আয় করেছে, সে অনুযায়ী এখন আর লা লিগায় সবচেয়ে বেশি বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বার্সেলোনার পক্ষে।
একটি ক্লাবের আয়ের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতনের পেছনে ব্যয় করা সম্ভব। সে অনুযায়ী বার্সেলোনা এ মৌসুমে খেলোয়াড় ও ক্লাবের স্টাফদের পেছনে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ইউরো ব্যয় করতে পারবে। আতলেতিকো মাদ্রিদের বেতন দেওয়ার ক্ষমতা কমে ২১ কোটি ৭০ লাখে চলে এসেছে। ওদিকে রিয়াল মাদ্রিদের বেতন দেওয়ার ক্ষমতা লা লিগায় এখন সবচেয়ে বেশি। চাইলে বেতনের পেছনে রিয়াল ৪৭ কোটি ৩০ লাখ ইউরো খরচ করতে পারবে।
বার্সেলোনা নিজেদের এ দুর্দশা কাটানোর চেষ্টা করছে ভালোভাবেই। এরই মধ্যে লেফটব্যাক জুনিয়র ফিরপোকে ১ কোটি ৫০ লাখ (১৫ মিলিয়ন) ইউরোতে লিডসের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। দলবদলের সময় ভবিষ্যতে বিক্রির একটা অংশ পাওয়ার শর্ত দিয়েছিল বেতিস। সেটি ও এমোর্টাইজেশন খরচ বাদ দিয়ে এ দলবদলে ৯.২ মিলিয়ন ইউরো আয় করছে বার্সেলোনা।
এ ছাড়া কনরাড ডে লা ফুয়েন্তে ও তোদিবোকে মার্শেই ও নিসের কাছে বিক্রি করে ১১.৫ মিলিয়ন পেয়েছে ক্লাবটি। এ দুজনের বেতন বাবদ খরচ কমেছে আর ৭ লাখ ইউরো।
ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাওকে ধারে উলভারহ্যাম্পটনে পাঠানো হয়েছে। সে সুবাদে বেতন বাবদ এ বছর ৮ মিলিয়ন ইউরো কমে যাচ্ছে বার্সেলোনার। ওদিকে ম্যাথিয়াস ফার্নান্দেজের চুক্তি শেষ করে দিয়েছে বার্সেলোনা। এ সুবাদে অবশ্য উল্টো ৪.২ মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে বার্সেলোনার।
বার্সেলোনার জন্য মূল দুশ্চিন্তার কারণ স্যামুয়েল উমতিতি, মিরালেম পিয়ানিচ ও ফিলিপ কুতিনিও। তিনজনই অনেক বেতন পান ক্লাব থেকে। কিন্তু কোচের পরিকল্পনায় নেই এরা কেউ। তাঁদের বিক্রি করার বহু চেষ্টা চালিয়েছে বার্সা। কিন্তু তাঁদের পেতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো ক্লাব। উমতিতি, পিয়ানিচ ও কুতিনিওর পেছনে বার্সেলোনার বার্ষিক খরচ যথাক্রমে ২০, ১৬ ও ২৮ মিলিয়ন ইউরো।

এরই মধ্যে উমতিতি ও পিয়ানিচকে এমনিতেই চলে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল বার্সা। কিন্তু এত বেতন অন্য কোথাও পাওয়ার নিশ্চয়তা না মেলায় সে প্রস্তাবে রাজি হননি দুজন।
ওদিকে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় কুতিনিওকে ধারে বায়ার্নে খেলতে পাঠিয়ে গতবার আর সে পথে এগোয়নি বার্সেলোনা। কিন্তু তাঁকে বিক্রি করার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। এবারও তাঁকে কেনার জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ। তাই এবারও তাঁকে ধারেই পাঠানোর পরিকল্পনা বার্সার। এ তিনজনকে যেকোনোভাবেই হোক ধারে পাঠিয়ে বেতন বাবদ ৬৪ মিলিয়ন ইউরো বাঁচানোর পরিকল্পনা বার্সেলোনার।
আগের দলবদল আর এই তিনজনের বেতন বাবদ ৮৯.৭ মিলিয়ন ইউরো জমিয়েও অবশ্য বার্সেলোনার লাভ হবে না। কারণ, লা লিগার বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একটি ক্লাব যদি তাদের বেতনের সীমা অতিক্রম করে, তবে পরে মৌসুমে খেলোয়াড় ছেড়ে দেওয়া বা দলবদলের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের মাত্র ২৫ ভাগ অর্থ নতুন দলবদলে খরচ করতে পারবে। অর্থাৎ ৮৯.৭ মিলিয়নের চার ভাগের এক ভাগ নতুন খেলোয়াড়ের পেছনে ব্যয় করা যাবে।
আয়করসহ আগুয়েরো ও ডিপাইয়ের বেতন বছরে ১২ মিলিয়ন ইউরো। ওদিকে গার্সিয়া ও এমারসন পাবেন মোট ৫ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ কোনোভাবে কুতিনিও, উমতিতিদের কোথাও ধারে পাঠাতে পারলেও শুধু বেতনের হিসাবেই নতুন চারজনকে ক্লাব লা লিগার অন্তর্ভুক্ত করতে পারছে না। আর এ চারজন তো ক্লাবে যোগ দেওয়ার জন্য বোনাসও চাইবেন, সেটা যোগ হলে বার্সাকে দলবদল করে আরও অর্থ আয়ের পথ খুঁজে নিতে হবে।
এর মধ্যে মেসির চুক্তির হিসেবই আসছে না। সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী মেসির কারণে বছরে ১০ কোটি বা ১০০ মিলিয়নের বেশি ব্যয় হতো বার্সেলোনার। মেসির চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে নতুন খেলোয়াড় হিসেবেই নেওয়া হবে। আর সেটি হলে তাঁর বেতনের চার গুণ আয়ের পথ খুঁজে নিতে হবে বার্সেলোনাকে। অর্থাৎ ক্লাবের হাতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু খেলোয়াড়কে বিক্রি না করে এটা সম্ভব হবে না।
এখন বার্সেলোনার একটাই আশা, হাভিয়ের তেবাস। ক্লাবের ধারণা, লা লিগা সভাপতি যতই হুমকি দেন না কেন, মেসির কারণে নিয়ম বদলাবেন না তিনি, শেষ পর্যন্ত এমন এক তারকার জন্য নিয়মে একটু ছাড় দেবেন তিনি। এরই মধ্যে তেবাসের সঙ্গে কথা বলছে ক্লাবটি। সে আলোচনা ফলপ্রসূ হলেই মেসিকে নতুন চুক্তি দিতে পারবে বার্সেলোনা। না হলে মেসিকে অন্য কোনো ক্লাবের জার্সিতেই দেখার জন্য প্রস্তুত থাকা ভালো
Leave a Reply