1. admin@ukbanglanews.com : UK Bangla News : Tofazzal Farazi
  2. tuhinf24@gmail.com : Firoj Sabhe Tuhin : Firoj Sabhe Tuhin
বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন

যেন বাঁধভাঙা জোয়ার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১০ মে, ২০২১
  • ১৪৫ বার

শিমুলিয়া ফেরিঘাটে মানুষ গিজগিজ করছে। হাতে ব্যাগ, মাথায় স্যুটকেস, দাঁড়িয়ে আছেন পন্টুনের সামনে। দৃষ্টি প্রসারিত পদ্মায়। প্রতীক্ষা ফেরির। একটি ফেরি ঘাটে পৌঁছামাত্র অপেক্ষমাণ মানুষ তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কে কার আগে উঠবে এ প্রতিযোগিতা চলে দীর্ঘ সময় ধরে। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। যে কয়েকজনের মুখে মাস্ক ছিল ফেরিতে উঠার ধাক্কায় পড়ে গেছে। গা ঘেঁষে দাঁড়ানোয় উপেক্ষিত সামাজিত দূরত্ব রক্ষার বিষয়টি। এ পরিস্থিতিতে কোনো ভাবে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও পণ্যবাহী যান উঠানো গেল ফেরিতে। দৃশ্যটি রোববার সকালের।

প্রায় কাছাকাছি সময়ে ঢাকার তেজগাঁও থেকে বিমানবন্দর সড়কে, মহাখালী ও বনানী এলাকায় যানজট। দীর্ঘ সময় ধরে স্থবির হয়ে আছে নগরীর ব্যস্ততম সড়কটি। এতে গণপরিবহণ হিসাবে আছে বাস, ছোট মাঝারি ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, দীর্ঘদিনের পুরনো যানবাহনও আছে যানজটের দীর্ঘ লাইনে। অথচ করোনার ভয়াবহতা রোধে দেশে চলছে লকডাউন। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন সড়কে থাকার কথা নয়।

প্রায় একই দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলোতে। এসব স্থানে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে যাত্রীদের ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত চেহারা, তারা বাড়ি ফিরছেন। মাইক্রোবাস, ছোট গাড়ি, ছোট ট্রাকের পেছনে গাদাগাদি করে বসে আছেন অনেকেই। কেউ জানেন না পাশের জন করোনার মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা। আবার মোটরসাইকেলের দুপাশে ঝুলছে ব্যাগ এবং পেছনে বাচ্চাসহ মহিলা যাত্রী। এরা একই পরিবারের সদস্য। ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে খবর আসছে ঢাকার বাইরে চলছে দূরপাল্লার বাস। যাত্রীরা রাজধানীর বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে সেই বাসে গন্তব্যে যাচ্ছেন। অথচ এবার ঈদে কর্মস্থলেই থাকার কঠোর নির্দেশ রয়েছে। যে কারণে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ সব বন্ধ করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের কেনাকাটার জন্য ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেটে দাঁড়ানোর উপায় নেই। এসব স্থানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। শুধু মার্কেট নয়, পাড়ার দোকান, অলিগলিতে আড্ডা, কাঁচা বাজার কোথাও তেমন বিধিনিষেধ নেই। এবার এপ্রিলের শুরুর দিকে কিছুটা ছিল। এরপর থেকে সেই আগের অবস্থা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ এবং ঈদের কেনাকাটার উত্তাপে লকডাইন উধাও হয়ে গেছে। এদের অধিকাংশই করোনায় সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধিগুলো উপেক্ষা করছেন। ফেরিঘাট, রাজপথ, মাকের্ট, পাড়া-মহল্লায়, অলিগলির দোকান, কাঁচাবাজার কোথাও লকডাউন প্রায় নেই বললেই চলে। যে যার মতো চলছেন। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে চলছে না। হাত ধোয়ারও বালাই নেই। স্বাস্থ্যবিধি প্রায় শতভাগ উপেক্ষিত। করোনার মতো ভাইরাসকে উপেক্ষা করেছে জনগণ। এর ফলও তাদেরই ভোগ করতে হবে। তারা (বিশেষজ্ঞ) বলেন ফেরিঘাটে পুলিশ, বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে তারা কি করবে। শত শত মানুষকে তারা কিভাবে সামাল দেবে। ফেরি ছাড়বে কিনা, তাতে যানবাহন না মানুষ পারাপার হবে সে সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকে হওয়া উচিত। ঘাটের লোকজনের পক্ষে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়। বিভিন্ন স্থানে সরজমিনে ঘুরে এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এসব পাওয়া গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের বাঁধভাঙা ঢল নেমেছে। কোনো বিধিনিষেধে তাদের আটকে রাখা যাচ্ছে না। ভেঙে ভেঙে মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন। এসব বাসে চড়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর অন্য বাস বা মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ ও ট্রাকে চড়ে বাড়ি ফিরছেন। ঢাকার বহির্গমন পথে হেঁটেও অনেককে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। বাস্তব চিত্র বলে দেয়, নামেই রয়েছে করোনার বিধিনিষেধ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিজ নিজ অবস্থানে ঈদ করার কথা বললেও সেটা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কঠোর না থাকায় ঘরমুখো মানুষকে আটকে রাখা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের চলাচল বাড়লে করোনা সংক্রমণও বাড়বে। ইতোমধ্যে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মানুষের চলাচল সীমিত রাখা খুবই জরুরি। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর সেটা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের হলে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রোববার শিমুলিয়া-বাংলা বাজার ফেরিঘাটে গিজগিজ করছে হাজার হাজার মানুষ। প্রশাসনের কঠোরতার মধ্যে কয়েকটি ফেরি চলাচল করেছে। এসব যানবাহনে হাজার হাজার মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে পারাপার হতে দেখা গেছে। আরিচা ফেরিঘাটে যানবাহন পারাপার বন্ধ থাকায় সেখানে মানুষের তেমন কোনো ভিড় ছিল না। তবে বিকল্প হিসাবে ট্রলারে অনেককে পার হতে দেখা যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ফেরির কারণে পারাপারে বাধাগ্রস্ত হলেও উত্তরাঞ্চল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য এলাকার মানুষ নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছেন। এসব এলাকার মানুষের যাত্রাপথে প্রশাসনের কারও বাধা দিতেও দেখা যায়নি।

শিমুলিয়া ঘাটে যশোরের মনিরামপুরের বাসিন্দা আবদুল হাকিম যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি করি। বউ, একমাত্র ছেলে নিয়ে থাকি। অনেকদিন বাড়ি যাওয়া হয়নি, এজন্য এবার ঈদ বাড়িতে করব। এজন্য সবাই মিলে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমার বাসার আশপাশের যাদের বাড়ি নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট বা উত্তরাঞ্চলে সবাই চলে গেছেন। তারা মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও ভেঙে ভেঙে বাসে চড়ে গেছেন। আমাদের যাওয়ার পথে ফেরি, এ কারণে সরকার আমাদের আটকে দিচ্ছে, এটাতো ঠিক না। বাধা দিলেও দিনে কয়েকটি ফেরি ছাড়ছে। আশাকরি, এমন কোনো একটি ফেরিতে আমরা নদী পার হয়ে চলে যেতে পারব।

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি কাউকে যেতে না দিতে চাইত, তাহলে ঢাকা থেকে বাসসহ সব পরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দিতে পারত। সেটা না করে নদী পারপারে বাধা দেওয়াকে যৌক্তিক মনে করি না। যে এলাকায় যাওয়ার পথে নদী নেই, সেখানে তো কাউকে বাধা দিতে পারছে না।

রোববারও মাওয়া ঘাটে হাজার হাজার যাত্রীকে রোদের মধ্যে ফেরির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। দিনে এক-দুটি ফেরি ছাড়লেও সেখানে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠেছেন। তারা বলছে, এত টাকা দিয়ে কষ্ট করে ঘাটে এসে দেখি ফেরি বন্ধ। ঢাকায় থাকেন ফরিদপুর, বরিশাল, যশোর, খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য সকাল থেকেই মাওয়া ঘাটে উপস্থিত হন। শনিবার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার কারণে রোববার এ অঞ্চলের মানুষের চাপ কিছুটা কম ছিল।

রোববার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের পরও সকাল থেকেই বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল দেখা গেছে। নৌপথেও ঘরমুখো মানুষের স্রোত প্রতিদিনই বাড়ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছে মানুষ। ফেরি বন্ধ থাকায় নানাভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পার হচ্ছেন অনেকেই। তাদের কেউ কেউ মাছ ধরা ট্রলারেই পাড়ি দিচ্ছেন খরস্রোতা পদ্মা। ফলে যে কোনো মুহূর্তেই বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকছে। এদিকে উত্তরবঙ্গ যাতায়াতের রাস্তাগুলোয়ও দিন দিন ঘরমুখো মানুষের স্রোত বাড়ছে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে নানা পন্থায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় বাড়ি ফিরছেন এরা। খোলা ট্রাক, পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত ছোট ছোট যানবাহনে বাড়ি ফিরছেন। গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত) ২৬ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে সরকারের টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বাস চলার পাশাপাশি মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেট কার চলছে দেদার। এর আগে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছিল ২৫ হাজার। আর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় যানবাহন চলাচল বেড়ে সেই সংখ্যাটা ২৬ হাজার। বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতু দিয়ে চলাচল করা অধিকাংশই ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং মোটরসাইকেল। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে রংপুরের উদ্দেশে রোববার ঢাকা ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান কবির। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বাবা-মাকে রেখে ঢাকায় কীভাবে ঈদ করব? কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা নোহা গাড়ি ভাড়া নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছি। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় গাড়ি ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিয়ে করেছি কয়েক মাস হলো। বিয়ের পর এটা আমাদের প্রথম ঈদ। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ করার জন্য পারিবারিক চাপ রয়েছে। সে কারণে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই আমরা রওয়ানা হলাম। আন্তঃজেলার বাস চলাচল না করায় গাড়ি ভাড়া করে রওয়ানা হয়েছি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ যুগান্তরকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ১৮ দফা, ১৩ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। তবে এখন অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছি যে, আন্তঃজেলার পরিবহণ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও মানুষ বাড়ি যাচ্ছে। প্রশাসন এটা কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পরিস্থিতি এভাবে চললে ঈদের পর তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছি। আর এটা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট হলে পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোজাহেরুল হক যুগান্তরকে বলেন, সরকারের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেও মানুষ চলাচল করছে। এতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে ধরা পড়েছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, কমনসেন্স (সাধারণজ্ঞান) থেকে বোঝা যায় মানুষের সংস্পর্শ যত বাড়বে, করোনা সংক্রমণ তত বাড়বে। এখন ভয়ের বিষয় হচ্ছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, এটা ছড়িয়ে পড়লে আমাদের স্বাস্থ্য খাত সেটা ব্যবস্থাপনা করতে পারবে না।

তিনি বলেন, সরকার আহ্বান জানিয়েছে, নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করতে। এ অবস্থার মধ্যে আবার জেলার ভেতরের বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। এটা সরকারের আহ্বানের সঙ্গে দ্বিমুখী আচরণ বলে মনে করি। সরকার চাইলে প্রশাসন সক্রিয় থাকত, কিন্তু এখন প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা লক্ষ করা গেছে। বিধিনিষেধ দিলে সেটা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার। আর সেটা করা সম্ভব না হলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে লকডাউন উঠিয়ে দেওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভাইরাসবিদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, চলমান লকডাউন একটি নন-মেডিকেল লকডাউন। কারণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে; কিন্তু সেটিকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়ানো হয়নি, গবেষণা হচ্ছে না, কন্টাক ট্রেসিং-আইসোলেশন কিছুই হচ্ছে না। এমনকি এই লকডাউনে সর্বস্তরে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে ঈদকে কেন্দ্র করে এক গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। ১৫ দিন পরে এর ভয়াবহ ফলাফল আমরা পেতে শুরু করব।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

শিবচর (মাদারীপুর) : বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ১/২টি ফেরি চললেও ঘাটে দীর্ঘ সময় আটকে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহনের যাত্রীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। জরুরি রোগীরা ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে মোটরসাইকেলে ৩ চাকার যানবাহনে এসে ঘাটে ও গন্তব্যে কয়েকগুণ ভাড়া দিয়ে পৌঁছাচ্ছেন। ঘাটে যাত্রীর সাথে যানবাহনের দীর্ঘ সারি রয়েছে। এদিকে মাছ, তরমুজসহ কাঁচামালে পচন ধরায় বাংলাবাজার ঘাটে বিআইডব্লিউটিসি ও পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, যাত্রী নিয়ন্ত্রণে যেন কোনো বিধিনিষেধই মানতে চাইছেন না দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। সকাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাট থেকে ২টি ফেরি অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন নিয়ে পার হয়। তবে যাত্রীদের চাপে জরুরি যানবাহন তোলা পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসিকে বেগে পড়তে হয়। ট্রাক চালক হায়দার আলী বলেন, প্রায় ৪ দিন ধরে তরমুজ নিয়ে ঘাটে বসে আছি। পকেটে খাবার টাকা নেই। রাতে কাঁচামাল পার করার কথা কিন্তু তাও পার হতে পারছি না। সারা রাতই ট্রাকগুলো একপাশে রেখে প্রাইভেটকার ও যাত্রী পার করছে ফেরি কর্তৃপক্ষ।

অ্যাম্বুলেন্স চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, মুমূর্ষু রোগী নিয়ে বরিশাল থেকে সকাল ৭টায় বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছেছি। গাড়ির মধ্যে রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরি ছাড়ার কথা বললেও ছাড়ছে না সময়মতো। ২/১টি ফেরি এলেও যাত্রীদের চাপে অ্যাম্বুলেন্স ওঠানো যাচ্ছে না।

রাজবাড়ী : দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু নানা অজুহাতে পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে ঢাকা থেকে মানুষ রওয়ানা হয়েছেন। এ নৌরুটে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স পার হওয়া ফেরিগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রীরা গাদাগাদি করে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে। দৌলতদিয়া ৩ নম্বর ফেরিঘাটে রজনীগন্ধা ফেরিতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত ঢাকা ফেরত যাত্রী রাকিব বলেন, অসুস্থ স্ত্রীকে সাথে নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকের সাথে ফেরিতে বাধা সত্ত্বেও অনেক কষ্টে পদ্মা নদী পার হই। এখন দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে এসে দেখি কুষ্টিয়া যাওয়ার মতো কোনো যানবাহন নেই। বিআইডব্লিউটিসির দৌলতাদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাটের টার্মিনাল সহকারী সিদ্দিক সেখ বলেন, শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্সবাহী রোগী ছাড়া ফেরিতে কোনো যাত্রীকে ঢাকা থেকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। এখন নির্দেশ পেলাম জরুরিভাবে চলাচলরত ফেরিগুলো বন্ধ করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 UK বাংলা News
Design & Developed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!