এক্সপ্রেসওয়েতে যে বাস দুর্ঘটনায় ১৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, সেই ইমাদ পরিবহনের সেই গাড়িটি এর আগেও ঘটিয়েছিল দুর্ঘটনা; সেই কারণে তার রুট পারমিট স্থগিত ছিল বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।
শুধু তাই নয়, বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদও শেষ হয়েছিল দুই মাস আগে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, বাসটি সড়কে ছিল অননুমোদিত।
‘অননুমোদিত’ সেই বাসটি রোববার সড়কে নেমে খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসার পথে মাদারীপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটনায় দুর্ঘটনা।
সকাল পৌনে ৮টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসটির সামনের অর্ধেক অংশই চুরমার হয়ে যায়। নিহত হয় ১৯ জন, যার মধ্যে বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারও রয়েছেন।
বাসের ১৯ জন আরোহী মারা যান এই দুর্ঘটনায়, তার মধ্যে বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারও রয়েছেন
দুর্ঘটনার পর খবর নিয়ে জানা যায়, ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে খুলনা পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি ছিল ইমাদ পরিবহনের ওই বাসের। তবে বাসটি গুলিস্তান পর্যন্ত আসত।
বিআরটিএ থেকে জানা যায়, ভারতের অশোক লেল্যান্ড ব্র্যান্ডের চেসিসের উপর এই বাসের কাঠামো তৈরি হয়েছে ২০১৭ সালে। বাসের নিবন্ধন নেওয়া হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী বাসটি ৪০ আসনের।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার রোববার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসটি আগেও দুর্ঘটনায় পড়েছিল। যে কারণে ওই বাসের রুট পারমিট স্থগিত করা হয়। এরপরও বাসটি চলছিল।”
মাদারীপুরের শিবচরে রোববার সকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়া বাসের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দুর্ঘটনাস্থলে পড়েছিল
ওই রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বালুবোঝাই ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয় ইমাদ পরিবহনের বাসটি। তারপর শাস্তি হিসেবে ওই গাড়ির কাগজপত্রের অনুমোদন স্থগিত করা হয়।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ বলেন, “ওই ঘটনার শাস্তি বহাল থাকা অবস্থায় তারা আরও বড় একটা অপরাধ করেছে। তাদের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট সবকিছুই স্থগিত ছিল। এরপরও তারা রাস্তায় গাড়ি নামিয়েছে, যা চরম অপরাধ।”
সবশেষ গত ১৮ জানুয়ারি ওই বাসের গাড়ির ফিটনেস সনদের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়। তবে চলাচল নিষেধাজ্ঞা থাকায় মালিকরা বাসের ফিটনেস নবায়ন করেননি।
বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে নিচে পড়া ইমাদ পরিবহনের বাস দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন
ইমাদ পরিবহনের মালিক হাবিবুর রহমান শেখ। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের আলিয়া মাদ্রাসা রোডে। তিনি সৌদি আরবে থাকেন। তার ভাই সাব্বির এবং ভাগ্নেরা পরিবহন ব্যবসা দেখাশোনা করেন।
ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মো. সেলিম শেখ দাবি করছেন, গত বছরের দুর্ঘটনার পর তাদের রুট পারমিট বাতিল হয়নি। গাড়ির নিবন্ধন সনদ স্থগিত রাখা হয়। এ কারণে তারা গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করতে পারছিলেন না।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ঘটনার পর গোপালগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক ওই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন লক করে দিয়েছিলেন। ওই বিষয়টি আমাদের জানায়নি, কোনো চিঠি দেয়নি।
“গাড়ির কাগজপত্র নবায়ন করতে গিয়ে দেখি এটা লক করা। যে কারণে ফিটনেস নবায়ন করতে পারিনি। আমাদের সব ফি ব্যাংকে জমা দেওয়া আছে। ওই এডির (সহকারী পরিচালক) সঙ্গে আমরা অনেকবার যোগাযোগ করেছি। তিনি আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি করছেন, কিন্তু লক খুলে দিচ্ছেন না।”
ইমাদ পরিবহনের বাস দুর্ঘটনায় নিহত হন মোট ১৯ জন
তবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলছেন, ইমাদ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“আগে অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছিল, এবার সব ধরনের অনুমোদন বাতিল করা হবে। পাশাপাশি মালিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা তো হচ্ছেই।”
Leave a Reply