গবেষণায় দেখা গেছে, বাসায় বসে কাজ করার পর কর্মীদের সামগ্রিক কর্মকুশলতা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। পশ্চিমা দেশগুলোর ১৬ হাজার কর্মীর ওপর জরিপ চালিয়ে এমন ফল পেয়েছে। আবার বাসায় কাজ করার কারণে কর্মীদের অসুস্থতাসংক্রান্ত ছুটি নেওয়ার হারও কমে যায়। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরুর পর করা পৃথক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বাসায় বসে অফিসের কাজ করায় উৎপাদন সক্ষমতা ও সৃষ্টিশীলতা বৃদ্ধি পায়। যদিও সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার তথ্য বলছে, বর্তমানে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ক্ষেত্রে কর্মীরা বেশি সময় ধরে অফিসের কাজ করলেও উৎপাদনশীলতার হার কমছে।
অর্থাৎ এই ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ফলাফল মিশ্র। এতে ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াটাও কঠিন। বাসায় বসে কাজ করার ক্ষেত্রে মনোযোগ ধরে রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ, বাসা একজন ব্যক্তির পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সময় কাটানোর স্থান। সেখানে যখন অফিসের ফাইলপত্র ঢুকে যায়, তখন পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সীমানা টানা জটিল হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে অফিসের কাজে উন্নতির পাশাপাশি, ব্যক্তিগত জীবনও শান্তিতে কাটানো যায়। আসুন, হোম অফিসে কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তা চট করে দেখে নেওয়া যাক—
১.নিজের বাসায় অফিসের কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা বেছে নিন এবং অফিসের ডেস্কের মতোই পরিবেশ তৈরি করে নিতে হবে। কাজ করার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শান্ত পরিবেশে সুস্থভাবে কাজ করার সুযোগ পেলেই তাতে অখণ্ড মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব। বাসার মধ্যে থেকেও অফিসকে এভাবে আলাদা করে ফেলতে হবে। তাতে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে প্রয়োজনীয় ফারাকও টিকে থাকবে।
২.সহকর্মীদের সঙ্গে স্পষ্ট যোগাযোগ রাখতে হবে। ওয়ার্ক ফ্রম হোমে যেহেতু কোনো সহকর্মীর সঙ্গেই অফিসের মতো সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হয় না, তাই ফোনে, ই–মেইলে, ভিডিও কলে পরিষ্কারভাবে কথা বলে নিতে হবে। সব তথ্য আদান–প্রদানে তৎপর থাকতে হবে। এ বিষয়ে সচেতন থাকলে যোগাযোগবিভ্রাট অনেক ক্ষেত্রেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। আবার ওয়ার্ক ফ্রম হোমে যেহেতু সবাইকেই বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে হয়, তাই কারও কারও মধ্যে একাকিত্ব অনুভূত হতে পারে। তাই সহকর্মীদের সঙ্গে কাজের বাইরেও যোগাযোগ রাখতে হবে কর্তাব্যক্তিদের। বাসায় বসে কাজ করতে গিয়ে তাঁরা কোনো সমস্যায় পড়ছেন কি না, সেই খোঁজখবরও রাখতে হবে। মহামারির দিনগুলোয় এ যোগাযোগটুকু একজন কর্মীকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে উৎসাহিত করতে পারে।
৩.বাসায় বসে কাজ করার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। যখনই এটি অনুভূত হবে, তখন কিছুক্ষণের বিরতি নেওয়া ভালো। কোথায় আপনার মনোযোগ হারাচ্ছে, সেটি খুঁজে বের করতে হবে নিজেকে। এরপর সচেতনভাবে মনোযোগ কাজে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু সময়ের মেডিটেশনও ভালো কাজে দিতে পারে।
৪.নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। বাসায় বসে অফিস করছেন বলে সারাক্ষণ শুধুই কাজ করতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। কোনো ব্যক্তির পক্ষেই দিনের ২৪ ঘণ্টা মনোযোগ ধরে রেখে কাজ করে যাওয়া সম্ভব নয়। অনেকে হয়তো এভাবে দেখাতে পারবেন যে লম্বা সময় ধরে কাজ করে চলেছেন। তবে তাতে কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। তা ছাড়া এটি স্বাস্থ্যকরও নয়। মনে রাখতে হবে, অফিসে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে যতক্ষণ কাজ করতেন, বাসায় বসেও ততটুকু করাই ভালো। মানসম্পন্ন কাজ করাটাই এখানে মূল। সারা দিন বাসায় বসে কাজে সংযুক্ত থাকলেও যদি কাজের কাজ কিছুই না হয়, তবে দিন শেষে পস্তাতেই হবে।
৫.ওয়ার্ক ফ্রম হোমে একই সময়ে একাধিক কাজ বা মাল্টিটাস্কিং করার অভ্যাস না করাই ভালো। বরং কোন কাজটি আগে করা দরকার, সেটি নির্ধারণ করে এক এক করে সমাধা করতে হবে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ক্ষেত্রে মাল্টিটাস্কিং কিছুটা ক্ষতিকর। এতে কাজের গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
৬.অফিসে কাজ করলে সহজেই অন্য সহকর্মীর কাছে সাহায্য চাওয়া যায়। তবে ওয়ার্ক ফ্রম হোম এ ক্ষেত্রে একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শারীরিক দূরত্ব থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই হাতের কাছে সহকর্মীদের পাওয়া যায় না। তবে তাই বলে সব কাজ একা করতে যাওয়ার উদ্যোগ নেবেন না যেন। এতে অত্যধিক কাজের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বরং প্রযুক্তির সহায়তায় সহকর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সাহায্য চান। এভাবে কাজের চাপ ভাগ করে নিলে পর্বতপ্রমাণ কাজও শেষ করে ফেলা যাবে কম কষ্টে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের ওয়েবসাইট, মিডিয়াম ডটকম, ফোর্বস ও হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ ।
Leave a Reply