সরকার পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে সীমিত পর্যায়ে বিপণিবিতান খোলার যে সুযোগ দিয়েছিল, তা নিচ্ছেন না চারটি বিভাগীয় শহরের ব্যবসায়ীরা। তিনটিতে দোকানপাট খুলবে। একটিতে ব্যবসায়ীরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
রাজধানী ঢাকায়ও বেশির ভাগ বিপণিবিতান বন্ধ থাকবে। এ তালিকায় গতকাল শনিবার যোগ হয়েছে গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ইস্টার্ন মল্লিকাসহ কয়েকটি বিপণিবিতান। এর আগে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেট, মোতালিব প্লাজা, মৌচাক মার্কেট, মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১১ নম্বরের বিপণিবিতানগুলো এবং ফুলবাড়িয়া ও গুলিস্তান এলাকার মার্কেটগুলো। সব সোনার দোকান বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে তাদের সমিতি।
বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ৯০ শতাংশ বিপণিবিতান বন্ধ থাকবে। সমিতি বলছে, এতে ঈদের কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
তবে ঢাকায় কিছু কিছু ব্যবসাকেন্দ্র এবং ব্র্যান্ডের পোশাক, জুতা ইত্যাদির দোকান খুলবে। এ তালিকায় রয়েছে পুরান ঢাকার কাপড়ের বাজার ইসলামপুর, অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী পোশাকের পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র উর্দু রোডের দোকানপাট ও চকবাজারের বিভিন্ন পণ্যের দোকান। খুলছে নিউমার্কেট–সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেট। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের কিছু দোকান ও রাপা প্লাজা খুলবে বলে নিশ্চিত করেছেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।
বড় কয়েকটি ব্র্যান্ড শপ খুলবে। তবে সব শাখা নয়। এর মধ্যে রয়েছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড আড়ং, জুতার ব্র্যান্ড বাটা, অ্যাপেক্স ও বে, পোশাকের ব্র্যান্ড ইয়োলো ইত্যাদি। দেশীয় ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের সমিতি ফ্যাশন উদ্যোগের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, তাঁদের ২৫০ জন সদস্যের মধ্যে যাঁর ইচ্ছা দোকান খুলতে পারবেন। অবশ্য ব্র্যান্ডগুলো তাদের সব দোকান খুলতে পারছে না শপিং মলগুলো বন্ধ থাকার কারণে।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমাতে সাধারণ ছুটির কারণে ২৬ মার্চ থেকে এসব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সরকার কারখানা খুলে দেওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল দোকানমালিক সমিতি বিপণিবিতানও খুলে দেওয়ার দাবি জানায়। সরকারও ১০ মে, অর্থাৎ আজ রোববার থেকে দোকানপাট খোলা রাখার সুযোগ দেয়।
এর মধ্যে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষ গত বুধবার সিদ্ধান্ত নেয় বিপণিবিতান বন্ধ রাখার। এরপর গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত একে একে বেশির ভাগ বিপণিবিতানকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী সমিতি দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা জানায়।
ঢাকার প্রায় সব বিপণিবিতান বন্ধ থাকছে। ‘সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে’ খুলছে আড়ংসহ কয়েকটি ব্র্যান্ড শপ। ইসলামপুর, চকবাজার ও উর্দু রোড খুলছে।
ঢাকার বিভিন্ন বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা তিনটি কারণে দোকানপাট খুলতে আগ্রহী নন। প্রথমত, গণপরিবহন চলবে না। দূরের ক্রেতারা যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। এ কারণে ক্রেতার আশা কম। দ্বিতীয়ত, পুলিশের পক্ষ থেকে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা মানা কঠিন। তৃতীয়ত, দোকানপাট খোলা রাখা যাবে সীমিত সময়ের জন্য। ঈদেরও বেশি দিন বাকি নেই। সব মিলিয়ে লাভের চেয়ে ঝুঁকির মাত্রা বেশি।
চাঁদনী চক ব্যবসায়ী ফোরামের সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন UK বাংলা News কে বলেন, ‘আমাদের মার্কেটে ছোট ছোট দোকান। সেখানে পুলিশের নির্দেশনা মানা সম্ভব নয়। দোকান খুললে কিছু বেচাকেনা হতো, কিন্তু ঝুঁকি বেশি।’
বিভাগীয় শহর
UK বাংলা News নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সিংহভাগ বিপণিবিতান বন্ধ থাকছে। রাজশাহীতে আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেটসহ সব ধরনের দোকানপাট কাল থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে।
খুলনার ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিপণিবিতান খোলা নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। তাঁরা আজ সারা দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। বরিশালের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব বিপণিবিতান খোলা থাকবে। কেউ চাইলে বন্ধও রাখতে পারবে। সিলেটে কোনো বিপণিবিতান খুলবে না। রংপুরে দোকানপাট খুলবে। তবে ময়মনসিংহের ব্যবসায়ীরা না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
খোলার পক্ষে যেসব যুক্তি
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আড়ং তাদের ২১টি বিপণিকেন্দ্রের মধ্যে ১৪টি খুলছে। সেখানে ঢুকতে হলে আগে অনলাইনে নিবন্ধন নিতে হবে। এক ঘণ্টা করে কেনাকাটার সুযোগ পাবেন ক্রেতারা। এর বাইরে ভিড় এড়াতে ও সুরক্ষার জন্য নানা ব্যবস্থা নিয়েছে আড়ং।
ব্র্যাক সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা আবেদ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা বছরের পুরো বিক্রির ৪৫ শতাংশ করেন পয়লা বৈশাখ ও ঈদ কেন্দ্র করে। তালিকাভুক্ত ৬৫ হাজার কারুশিল্পীর জীবিকা নির্ভর করে ব্র্যাকের ওপর। তিনি বলেন, ‘আড়ংয়ের মুনাফা মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয়। এতে ব্যক্তির লাভের কোনো সুযোগ নেই। সীমিত পরিসরে কিছু পণ্য বিক্রি করতে পারলে কারুশিল্পীদের পরবর্তী ক্রয়াদেশ দিতে পারব।’
পুরান ঢাকার ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শামসুল আলম UK বাংলা News কে বলেন, ‘কিছু বিক্রি করতে পারলে ঈদের আগে আমার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারব। যাঁরা বড় চেয়ারে বসে বন্ধের সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, তাঁরা কী বিবেচনায় সেটা করছেন, আমরা বুঝতে পারি না।’
দোকান মালিক সমিতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, দেশে ১৫ জনের কম কর্মচারী থাকা পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬, যা মোট প্রতিষ্ঠানের ৩৯ শতাংশ। এসব প্রতিষ্ঠানে ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৯২৯ কর্মী কাজ করেন। তাঁদের মোট মাসিক বেতন ১৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।
ঈদের আগে কি শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাবেন, জানতে চাইলে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সাধ্য অনুযায়ী দেওয়ার কথা বলেছি।’
Leave a Reply