মুম্বাই, ১৬ মে- তার ক্যারিয়ারের গল্প অনেকটাই লঙ্কান কিংবদন্তি সনাৎ জয়াসুরিয়ার মত। শেষপর্যন্ত ড্যাশিং ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও জয়াসুরিয়া শুরুতে ওপেনার ছিলেন না। একইভাবে এ মুহূর্তে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেসার রোহিত শর্মাও ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রায় চার বছর খেলেছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে।
২০০৭ সালের ২৩ জুন যখন অভিষেক হয়, তখন তার পক্ষে ওপেন করা সহজও ছিল না। তখন ভারতের উদ্বোধনী জুটিতে ছিলেন শচিন টেন্ডুলকার আর সৌরভ গাঙ্গুলি। রোহিত শর্মা খেলতেন মিডল অর্ডারে, ছয়-সাতের আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেতেন না। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ওপেনারের ভূমিকায় দেখা যায় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে।
পরের গল্প সবার জানা। যত সময় গড়িয়েছে, সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ততই ওপরে উঠেছেন রোহিত শর্মা। এখনও পর্যন্ত ২২৪ ওয়ানডের প্রায় অর্ধেক (১২৮ বার) সময় ওপেন করলেও বাকি ম্যাচগুলোয় তিন থেকে সাত নম্বর পর্যন্ত পজিশনে ব্যাট করেছেন রোহিত শর্মা।
তার নামের পাশে রয়েছে ২৯ সেঞ্চুরি ও ৪৩ হাফ সেঞ্চুরি। এর মধ্যে ২৭ সেঞ্চুরি ও ৩১ হাফসেঞ্চুরিই করেছেন ওপেন করতে নেমে। তার সবচেয়ে বড় অর্জন, ওয়ানডে ক্রিকেট তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির দূর্লভ কৃতিত্বও দেখিয়েছেন ইনিংসের সূচনা করতে নেমেই।
রোহিতের ব্যাটিং শৈলী, সৌন্দর্য্য আর শৈল্পিকতা নিয়ে খুব বেশি কথা হয় না। তবে তার বড় ইনিংস খেলার অস্বাভাবিক ক্ষমতা নিয়ে রাজ্যের আলোচনা সর্বত্র। কী করে একজন ব্যাটসম্যান একদিনের সীমিত ওভারের খেলায় তিন-তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেন?
ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রায় পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে যা কখনও কেউ পারেননি, রোহিত শর্মা সে কাজটি বারবার কিভাবে করেন- তা নিয়ে রাজ্যের জল্পনাকল্পনা আর নানা কৌতূহলও আছে। এই ড্যাশিং উইলেবাজের ওপেনার হওয়ার গল্পটাই বা কেমন? এসব জানতেও উৎসাহী ক্রিকেট অনুরাগীর সংখ্যা প্রচুর।
শুক্রবার রাতে তামিম ইকবালের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে নিজের ওপেনার হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন রোহিত শর্মা। এই গল্প করতে গিয়ে সঙ্গী শিখর ধাওয়ানের প্রশংসা করেছেন অকপটে। বলেছেন, তার নির্ভার খেলার পেছনে সঙ্গী শিখর ধাওয়ানেরও একটা ভূমিকা আছে। পাশাপাশি বড় ইনিংস খেলার পেছনের রহস্যটাও বলেছেন রোহিত।
তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘আমি নিয়মিত ওপেন করতাম না। ইনিংসের সূচনা করতে শুরু করেছি ক্যারিয়ারের বেশ কয়েক বছর যাওয়ার পর। তাও সেটা নিয়মিত ওপেনার হিসেবে নয়। হয়তো কোন ওপেনার আহত হয়েছে, তার জায়গায় আমাকে ওপেন করতে পাঠানো হতো।’
রোহিত জানিয়েছেন, নিজেকে অনেক ঘষে মেজে তৈরি করতে হয়েছে। কারণ ক্যারিয়ারের শুরুতে সবার মতো তিনিও প্রচুর ভুল করেছেন। সে সব ভুল সংশোধন করে সামনে আগাতে হয়েছে। কেমন ছিল সে পথ?
অকপট স্বীকারোক্তি, ‘আমি শুরুর দিকে অনেক ভুল করেছি। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ বছর মিডল অর্ডারে ব্যাট করতাম। তখন অনেক ভুল করেছি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেকেই ভুল করেন। আসলে তখন ভুল করাটা অস্বাভাবিকও নয়। তারপর আমি নিজেকে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করেছি। আমার ব্যাটিংয়ে আরও শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করেছি। এখন যতটা সম্ভব কম ভুলের চেষ্টা করি।’
এতগুলো ডাবল সেঞ্চুরি এবং নিয়মিত বড় ইনিংস খেলার পেছনের কাহিনী কী? নিজেকে কিভাবে তৈরি করেন? তিন-তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির অনুপ্রেরণাই বা কী? সবার এ কৌতূহলি প্রশ্নের জবাবও আছে, ‘আমি কিছু বিষয় মাথায় রাখি। শুরুতে একটু সময় নিতে চেষ্টা করি।’
কথায় কথায় রোহিত বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওপেনার হিসেবে তার সাফল্যে ধাওয়ানেরও ভূমিকা আছে। তাই তো অকপটে সঙ্গীর প্রশংসা, ‘আমার কাজটা ভালো মতো করার পেছনে ধাওয়ানও হেল্প করেছে। সে যদিও মাটিতে রেখেই খেলে বেশি, তবে বেশ অ্যাটাকিং ব্যাটসম্যান। এটাই তার শক্তি। তার প্লেসমেন্টগুলোও পারফেক্ট। আমি সেগুলো শুরুর দিকে মাথায় রেখেছি। এসব দেখেই আমি আমার করণীয় ঠিক করে নিয়েছি। আমি ধরেই নিয়েছি, আমার কাজ হলো যত বেশি সময় উইকেটে থাকা যায়। অন্তত ৪০-৪৫ ওভার পর্যন্ত। ব্যাট করতে গেলে সেটাই আমার মাথায় থাকে।’
‘শুরুর দিকে আমি বেশিরভাগ সময় ধাওয়ানকে স্ট্রাইক দিতে চাই। আমি জানি, পরের দিকে পুষিয়ে নিতে পারব। আমরা যখন ৩০০ রান তাড়া করি, তখন আবার কৌশল পাল্টে যায়। তখন ব্যাপারটা অমন থাকে না, যে শুধু রোহিত শর্মাই মারবে। তখন আমার চিন্তা থাকে যত কম ভুল করা যায়।’
সূত্র: জাগোনিউজ
Leave a Reply