ভারত: ৫০ ওভারে ২৪০
অস্ট্রেলিয়া: ৪৩ ওভারে ২৪১/৪
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয়ী
কী ব্যাপার, ফাইনালে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে না ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শক! সংখ্যাটা ১ লাখ ৩০ না ৩২—একটা ধোঁয়াশা ছিল। তা ৩০ আর ৩২-এ এমনকি আসে যায়! তবে হঠাৎই তা ৯২ হাজারে নেমে গেলে শুধু আসে-যায়ই না, বড় প্রশ্নও ওঠে। যে ফাইনালের টিকিট নিয়ে এমন কাড়াকাড়ি, কালোবাজারে ১৫–২০ গুণ দামে বিক্রি এবং একসময় কালোবাজারেও আর তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে খবর, সেই ফাইনালে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে দর্শক ছিলেন নাকি ৯২ হাজার ৪৫৩!
আইসিসির মিডিয়া কর্মকর্তার এই ঘোষণা বেশি বিস্ময়ের, নাকি ফাইনালে ভারতের অমন অসহায় আত্মসমর্পণ—এটা একটা প্রশ্ন বটে। এই বিশ্বকাপে অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়ার মতো বল্গাহীন ছুটতে থাকা ভারতের জয়রথ এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ার হতাশায় স্তব্ধ স্টেডিয়ামে ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শক থাকলেন না ৯২ হাজার, তাতে অবশ্য কিছু আসে যায় না। সংখ্যার কম-বেশিতে নীরবতায় কোনো পার্থক্য হয় না।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে জয়সূচক ২ রান আসার পরপরই মাঠে হলুদ উৎসব। আকাশে আতশবাজির রোশনাই। কিছুক্ষণ পর সাউন্ড বক্সে বাজতে শুরু করেছে গান। কিন্তু এসবকেও ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে নীল সমুদ্রে পরিণত গ্যালারির নীরব আর্তনাদ। বেদনার রং তো নীলই, তাই না!
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের দল। আরও বেশি নকআউট ম্যাচের। ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে পঞ্চম বিশ্বকাপ জয়ের সময়ই পাঁচটি ভিন্ন মহাদেশে বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গিয়েছিল। ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জিতে নতুন চক্রের শুরুটা যে ভারতে, এর বাড়তি তাৎপর্য আছে। ৩৬ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ-আধিপত্যের শুরু তো এখানেই।
একতরফা এই ফাইনাল বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্যের কথা তো অবশ্যই বলছে। তার চেয়েও কি বেশি আইসিসি টুর্নামেন্টে আসল সময়ে ভারতের ভেঙে পড়ার? ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর গত ১০ বছর ধরে তো ঘুরেফিরে সেই একই গল্প। নকআউট ম্যাচে ভারতের নকআউট হয়ে যাওয়া!
এই ১০ বছরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল হেরেছে ভারত। দুটি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালও। তবে সেসবকেও হয়তো ছাড়িয়ে গেল এবারের ব্যর্থতা। অপরাজিত থেকে ফাইনালে, সেই অপরাজেয় যাত্রাও কী দাপুটে! অথচ ফাইনালে কোনো লড়াই-ই নেই। ২৪০ রান করার পর এমনই হওয়ার কথা। ভারতের অবিশ্বাস্য বোলিং পারফরম্যান্স অথবা অস্ট্রেলিয়ার খুবই বাজে ব্যাটিং ছাড়া এই ফাইনালের ভাগ্য তো বিরতির সময়ই নির্ধারিত হয়ে গেছে।
টসে জিতে প্যাট কামিন্সের প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তই কি সেটি ঠিক করে দিয়েছে? তখন তা অবশ্যই বোঝা যায়নি। বরং কামিন্স ভারতের হাতে বিশ্বকাপটাই তুলে দিলেন কি না, এই আলোচনা হচ্ছে। আহমেদাবাদের উইকেট ধীর থেকে আরও ধীরগতির হবে বলেই তো ধারণা ছিল সবার। সেখানে ভারতের হাতে ব্যাট তুলে দেওয়া মানেই তিন শ-সাড়ে তিন শ। অস্ট্রেলিয়া সেটি তাড়া করতে পারবে নাকি! বিশ্বকাপ ইতিহাসেই নকআউট ম্যাচে তিন শর বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। আর এটা তো ফাইনাল। বিপক্ষে শুধু ভারতের ১১ জনই নয়, পুরো গ্যালারিও।