পালানোর সময় নৌকা ডুবে মৃত্যু এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটছে। তারপরও থামছে না পলায়নের এই প্রবণতা।
ভাসানচর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত ৬৬৮ জন রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে পালিয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন স্বেচ্ছায় আবার ফিরে এসেছে। পালিয়ে যাওয়ার সময় সাগরে নৌকা ডুবে ১৪ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু মারা গেছে।
“এছাড়া এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দুইশ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। তাদের পালাতে সহায়তার অভিযোগে দালাল সন্দেহে ১৭ জন বাঙালিকে আটক করা হয়েছে।”
এসব ঘটনায় থানায় ভাসানচর থানায় আটটি মামলা হয়েছে বলেও ওসি জানান।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচরে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছয় দফায় ১৮ হাজার ৩৩৪ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ১৮ হাজার ৫৯৩ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছে এখানে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গার ভাসানচরে আসার পর থেকে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চর আলাউদ্দিন গ্রামের ৫০-৬০ জনের একটি চক্র তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছে। এই চক্রটি এক সময় নদীতে দস্যুতার সঙ্গে জড়িত ছিল।
তারা জনপ্রতি ২৫-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাতের অন্ধকারে ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চর আলাউদ্দিনের গোপাল ঘাটে নামিয়ে সেখান থেকে অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলে জেলা সদরের সোনাপুর বাস টার্মিনালে পৌঁছে দেয়।
রোহিঙ্গা পাচারের অভিযোগে চর আলাউদ্দিন গ্রামের সাইফুল, নুর ইসলাম ও রুবেল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এখন কারাগারে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ভাসানচর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকে সাগরে মাছ ধরার অজুহাতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে।
ভাসানচরে অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন বলেন, “ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রয়েছে। সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে অধিকাংশ রোহিঙ্গা এখানে থাকতে চাচ্ছে। এরপরও দুচার জন দালাল তাদেরকে ফুসলিয়ে বের করতে চাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, নেভি, কোস্টগার্ড তাদের বেইজে থাকে। অনেক রোহিঙ্গা প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরতে যায়। বিশাল দ্বীপের কোন পাশ দিয়ে নৌকায় করে দালালের মাধ্যমে পালিয়ে যায় তা বোঝা মুশকিল।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের পালানো ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, এপিবিএন, আরআরআরসি, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও বিছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে। রোহিঙ্গা পালানোর প্রতিটি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
“পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা এবং তাদের পালাতে সহায়তাকারী দালালদের আটক এবং এসব ঘটনায় মামলা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা পাচারের সাথে জড়িতদের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে।”
Leave a Reply