শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে, চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় তিনি জানান, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমরা খুলে দিতে পারবো ইনশাল্লাহ। আমরা গতকাল জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেছি। আসছে ৫ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক রয়েছে। কঠোরভাবে মনিটর করা হবে যেন স্বাস্থ্যবিধি বজায় থাকে। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন যাদের বয়স ১২’র ওপরে তাদের যে সকল টিকা দেয়া যাবে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে। শুধু এককভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পারবে না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবক সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের পাশাপাশি প্রশাসনসহ সকলের সহায়তা কামনা করছি।
ডা. দীপু মনি আরো বলেন, এই ১৭ মাস স্কুল বন্ধ থাকার সুফল আমরা পেয়েছি। করোনার প্রভাব কিছুটা হলেও কম হয়েছে এতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও সশরীরে পাঠদানের ক্ষেত্রে তিনটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ সাজাতে হবে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে। ৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী এবং ৫ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করতে পারবে। শ্রেণিকক্ষে সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
শিক্ষামন্ত্রী আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে আমরা আবার বসবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল নেয়। আমরা উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা অন্তত প্রশত ডোজ টিকা যেন নিতে পারে। এজন্য আমরা অক্টোবরের মাঝামাঝি খোলার একটা তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম। এখন তাদের সাথে আবারো কথা বলবো, ওনারা যদি অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে খুলতে রাজি হন, কিংবা ভিন্ন কোন তারিখ নির্ধারণ করেন সেটি ওনাদের বিষয়।
ডা. দীপু মনি আরো জানান, আগের ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছরের নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা যেই এসাইনমেন্ট দিচ্ছি পরীক্ষার জন্য কিভাবে তৈরি হবে। এসাইনমেন্ট করলেই পরীক্ষার প্রস্তুতি হয়ে যাবে। পরীক্ষা হওয়া নিয়ে কোন সন্দেহ নেই ইনশাআল্লাহ।
করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সর্বশেষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই সাধারণ ছুটি বিদ্যমান ছিলো। ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে দাবি সবচেয়ে বেশি জোরালো।
এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সংসদ অধিবেশনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সবাইকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
এরপরই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঘোষণা দেন, ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেয়া হবে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ। পর্যায়ক্রমে মেডিক্যাল কলেজের ১ম, ২য় ও ৫ম বর্ষের ক্লাস চালু হবে। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সরকারি সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করে কোভিড নাইন্টিন সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি।
এদিকে, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি একাধিক উপায় প্রস্তাব করে। সেগুলো হলো:
১. পরীক্ষা হবে বিভাগ অনুযায়ী শুধু নৈর্বাচনিক বিষয়গুলোতে।
২. আবশ্যিক এবং চতুর্থ বিষয়ের মূল্যায়ন হবে এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসির ফলাফল এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলে ওপর।
৩. দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা হবে। এক ঘণ্টা লিখিত, আধ ঘণ্টা এমসিকিউ। চাপ কমাতে দুই ক্ষেত্রেই থাকছে একাধিক অপশন।
৪. বিভাগ অনুযায়ী একদিন করে বিরতি দিয়ে পরীক্ষা হবে।
৫. ব্যবহারিকের ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের যে কোন দুইটি শিরোনামের ব্যবহারিক জমা দেবে পরীক্ষার্থীরা।
এর আগে, বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে স্বশরীরে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ৯ দিনের এই পরীক্ষা চলবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
Leave a Reply