ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া মহসিন খানের আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন আবু মহসিন খান। রাত ৯টার দিকে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
খবর পেয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আবু মহসিন খান একাই ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন বলে সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন তিনি।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘মহসিন খানের সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, ব্যবসায় ধস নেমে যাওয়ায় আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে অনেকের লেনদেন ছিল। কিন্তু তারা টাকা দেয়নি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’ এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মহসিন খান ২০১৭ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।
ঘটনাস্থলে পুলিশ আরও জানায়, মরদেহের পাশে থাকা একটি টেবিল থেকে পাঁচটি কাগজ ও কাফনের কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। কাগজে পারিবারিক নানা হতাশার কথা লেখা রয়েছে। একটি কাগজে লেখা রয়েছে কার কাছে তিনি কত টাকা পাবেন। ফ্ল্যাটের দরজায় সাদা কাগজে লেখা ছিল মামা দরজা খোলা, ধাক্কা দিয়ে ভেতরে আসুন। নিহতের বাসা থেকে তাঁর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ও একটি ল্যাপটপও জব্দ করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া কাপড়ের ওপর একটি সাদা কাগজে লেখা ছিল, ‘ আমি এই কাপড় পরে ওমরা করেছি। এই কাপড় দিয়েই যেন আমাকে দাফন করা হয়।’
শ্বশুরের মৃত্যুর খবর শুনে নায়ক রিয়াজ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের রিয়াজ বলেছেন, এ মৃত্যুর বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না। পুলিশ তদন্ত করে যা পাবে, তার সঙ্গেই তাঁরা একমত পোষণ করবেন।
ফেসবুক লাইভ দেখে মহসিন খানের বাসায় ছুটে এসেছেন তাঁর স্ত্রীর খালাতো বোন আফরোজা ফারহানা আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এসে দেখি ফ্ল্যাটের সামনে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। … ভেতরে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় দুলাভাই চেয়ারে বসে আছেন। পাশেই পিস্তল পড়ে আছে।’
ফারহানা আহমেদ আরও বলেন, ‘মোহাম্মদপুরে আমাদের এক বোনের শাশুড়ি মারা গেছেন। দুপুরে নিজের গাড়ি চালিয়ে জানাজা পড়তে গিয়েছিলেন দুলাভাই। জানাজা শেষে তিনি বাসায় চলে আসেন।’
আবু মহসিন খানের প্রতিবেশী মুজাহেরুল হক শহিদ বলেন, ‘আমি বাইরে ছিলাম। ফেসবুক লাইভের বিষয়টি জানতে পারি। পরে পুলিশে খবর দিই।’
এস এম মিজানুর রহমান নামের এক আত্মীয় বলেন, মহসিন খান পোশাক কারখানায় সুতা সরবরাহ করতেন। ঋণে জর্জরিত হয়ে তিনি ব্যবসা ছেড়ে দেন। ২০১৭ সালে তাঁর মূত্রনালিতে ক্যানসার ধরা পড়ে। বিদেশে চিকিৎসা করেছিলেন।বাসায় কোনো কাজের লোক ছিল না। বাইরে থেকে খাবার এনে খেতেন।
আবু মহসিন খানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান।
আবু মহসিন এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। ছেলে বড়। তিনি মাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।
Leave a Reply